নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা চালু, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির দাবিতে সিপিবি’র বিক্ষোভ
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা চালু, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জনজীবনে শান্তি, সর্বত্র সম্প্রীতি রক্ষা, দুর্নীতি-লুটপাট-দখলদারিত্ব বন্ধ, পাচারের টাকা-খেলাপী ঋণ আদায়, শ্রমিকের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, কৃষক-ক্ষেতমজুরের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন, সবার জন্য কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য-শিক্ষার নিশ্চয়তা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রবর্তন, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী আগ্রাসন রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে্ণাগতকাল ৯ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), কোতোয়ালি থানা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি, কোতোয়ালি থানার সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা, সিপিবি কোতোয়ালি থানার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ সেন, রুপন কান্তি ধর, রাশিদুল সামির প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, চাল-ডাল-সবজি, তেল, চিনি, পিয়াজ, আদা, রসুন থেকে শুরু করে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোয়া। বাজারে গেলে মানুষ এখন আর হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারেন না। প্রতি মুহূর্তে মানুষ টের পাচ্ছেন যে তার টাকার দাম কমে যাচ্ছে। যে হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে আয় বৃদ্ধি পায়নি।দেশের বিপুল অংশের শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। গোটা বাজার আজ গুটিকয়েক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এই ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবৈধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। মজুতদার -মুনাফাখোর ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে টিসিবির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর আমদানি, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। গ্রাম-শহরসহ সারাদেশে সাশ্রয়ী, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু ও স্বল্প আয়ের মানুষকে বাঁচাতে সারাদেশে পর্যাপ্ত ন্যায্যমূল্যের দোকান ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, দেশবাসী স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে উৎখাত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে আশুলিয়ায় শ্রমিকের বুকে গুলি করা হলো। গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শ্রমিক–জনতা এমন আচরণ আশা করেনি। অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা এবং শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। তাই সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে হবে। অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক দল সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, অসৎ রাজনৈতিক, অসৎ আমলা আর অসৎ ব্যবসায়ী মিলে যে দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক ধারা তৈরি করেছে, এরাই ছিল লুটপাটের অর্থনীতির পাহারাদার। এখনো লুটপাটের ধারার অর্থনীতি চলমান। এই অর্থনীতি চলমান রেখে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি পরিবর্তন করা যাবে না।
গণঅভ্যুত্থানের কোন দল বা গোষ্ঠী বিজয়ী হয়নি, অথচ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে দখলদারী, চাঁদাবাজির হাত বদল হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারিত্ব চাঁদাবাজি থেকে দেশকে মুক্ত করে ভয়ের রাজত্বের অবসান ঘটাতে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিদেশে পাচারকৃত টাকা দ্রুত ফেরত আনা, ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহন করতে হবে।
সভায় বক্তারা, দেশের উপর সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য শক্তির হস্তক্ষেপের বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়। গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় স্বৈরাচারী ব্যবস্থার উচ্ছেদ ও বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।