un

শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্তের সাথে জাহাজভাঙা এবং রিরোলিং মিল শ্রমিকদের মতবিনিয়

-জাহাজভাঙা এবং রিরোলিং মিল শ্রমিকরা শুনালো তাদের বঞ্চনার গল্প

গতকাল সকাল ১০টায় সীতাকুণ্ড উপজেলা মিলনায়নে শ্রম কমিশনের সদস্য তপন দত্তের সাথে জাহাজভাঙা এবং রিরোলিং মিল শ্রমিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব কে এম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বিলস-ডিটিডিএ পকল্পের অধীনে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার। জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আলী, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইদ্রিছ, টিইউসির সংগঠক মানিক মন্ডল, কাটার ফোরম্যান ও শ্রমিকনেতা মোঃ জামাল উদ্দিন, বিএমএফ এর নেতা জাহেদুল আলম, মোঃ মহিউদ্দিন, রিরোলিং মিল শ্রমিকনেতা মোঃ রাসেল এবং মোঃ আরিফ প্রমুখ।

সভায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাহাজভাঙা সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ২০১৮ সালে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এখনো  বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে  জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা সত্বেও ন্যায্য মজুরি পাওয়া থেকে জাহাজভাঙা শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে এবং তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। জাহাজভাঙা শ্রমিকেরা নিম্নতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করে ২০১৮ সাল থেকে হিসাব করে সমস্ত বকেয়া মজুরি পরিশোধ করার দাবি জানান এবং বর্তমান বাজার দর বিবেচনায় নিয়ে জাহাজভাঙা ও রিরোলিং মিল শ্রমিকদের মাসিক নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারন করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

রিরোলিং মিল শ্রমিকেরা জানান, তারা রাত্রীবেলায় কাজের সময় যদি আহত হন, দেখাশুনার কেউ থাকে না। অফিস স্টাফ না আসা পর্যন্ত আহত শ্রমিককে যন্ত্রনায় কাতরাতে হয়। দেখার কেউ থাকে না। এমনকি মরে গেলেও শ্রমিকদের কিছুই করার থাকে না। তারা জানান রিরোলিং মিলে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক কম-বেশী আহত হয়ে থাকে। কিন্তু আহত  শ্রমিকেরা কেউ ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা খরচ পায় না। অসুস্থ্য হয়ে চাকরি করতে না পারলে মজুরিও দেওয়া হয় না।

সভায় উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাহাজভাঙা সেক্টর এবং রিরোলিং মিল শিল্প হিসাবে ঘোষনা করা হলেও এই দুই সেক্টরের শ্রমিকেরা শ্রম আইনে বর্ণিত ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই সেক্টর সমূহে শ্রম আইনের একেবারে প্রাথমিক অধিকার তথা নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক ইত্যাদি কিছুই দেওয়া হয়না। অধিকাংশ জাহাজভাঙা সেক্টরের শ্রমিকেরা কাজ করে ঠিকাদারের অধীনে। ফলে অনেক সময় মাসিক নিয়মিত মজুরি থেকেও তারা বঞ্চিত হয়। এখানকার বেশীরভাগ ঠিকাদারের কোন রেজিস্ট্রশন বা লাইসেন্স না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, জাহাজভাঙা এবং রিরোলিং মিল শ্রমিকদেরকে কোন প্রকার সবেতন ছুটি দেওয়া হয় না তারা কেবল কাজ থাকলে মজুরি পায় আর মালিকের যদি কাজ না থাকে এবং সেই কারনে যদি ইয়ার্ড বা মিল বন্ধ থাকে তাহলে তারা কোন মজুরি পায়না। এই ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করে দায়ী মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।

শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, একটি শোষনমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ তৈরির লক্ষে ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও জাহাজভাঙা এবং রিরোলিং মিল শ্রমিকদের বঞ্চনার গল্প শুনে ভীষন ব্যথিত হয়েছি। তিনি জাহাজভাঙা ও রিরোলিং মিল শ্রমিকদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং শ্রমিকদের বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য প্রোয়োজনীয় সুপারিশ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

বিশেষ অতিথি কে এম নাজিম উদ্দিন বলেন, শ্রমজীবী মানুষের হারানোর কিছু নেই। বরং ঐক্যব্দধভাবে কাজ করতে পারলে বঞ্চনার গল্প উল্টিয়ে দেয়া সম্ভব। তিনি সবাইকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা আহ্বান জানান।