জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই চান বিএনপি, প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবে অসন্তুষ্ট দলটি
ঢাকা | ১৭ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিএনপি। দলটির দাবি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইছে তারা। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে—এমন সময়সীমা উল্লেখ করায় হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি।
বুধবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আমাদের সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা আরও বাড়বে।”
বৈঠকে বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ।
বিএনপির দাবি, নির্বাচন আয়োজনের জন্য মৌলিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টা এখনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। বরং সরকারের ভেতরে একটি পক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে।
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন আগামী বছরের জুনের পরে যাবে না। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “নির্বাচন জুনের মধ্যেই হবে—এটা প্রধান উপদেষ্টার জাতির প্রতি অঙ্গীকার।”
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এখনই কোনো বৃহৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক মিত্র ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। ঘরোয়া সভা-সেমিনার, জেলা ও মহানগরভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারকে চাপ দেবে দলটি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীও ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন নয়, বরং আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তারা এমন কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সরকার দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার শুরু করলেও বিএনপির দাবি, এই সংস্কারের পূর্ণ বাস্তবায়ন নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারকেই করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টারে সম্মত হতে পারি। তারপর নির্বাচন হতে পারে। যেসব বিষয়ে মতভেদ থাকবে, সেগুলো নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে।”
নির্বাচনের নির্ধারিত সময় নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা কতটা বাড়ে বা সমঝোতার পথ খোলে—তা এখন সময়ই বলে দেবে।