চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯৫তম বার্ষিকীতে বক্তাদের আহ্বান: ১৮ এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস ঘোষণা করা হোক

 চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যুব সমাবেশ থেকে ১৮ই এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। শুক্রবার বিকেলে নগরীর জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে আয়োজিত এ যুব সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এই বিদ্রোহই পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁরা আরও বলেন, উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে সূর্যসেন, প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তসহ বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ আজও প্রাসঙ্গিক, বিশেষত বর্তমান বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ ও অভ্যন্তরীণ শোষণের প্রেক্ষাপটে।

সমাবেশে বক্তারা ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শভিত্তিক যুব আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং মাস্টারদা সূর্যসেন ও অন্যান্য বিপ্লবীদের নামে নগরীর প্রধান সড়কের নামকরণেরও দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “সমাজতন্ত্র ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ সম্ভব নয়। বর্তমানে সমাজতন্ত্রবিরোধী শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীরা সরকার পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধ্বংস করে দেশে নতুনভাবে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের ভেতরে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব স্পষ্ট। পাকিস্তান আজও ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি, অথচ আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শাহ আলম, পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, প্রেসিডিয়াম সদস্য চৌধুরী জোসেন, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া, সহসভাপতি প্রীতম চৌধুরী, এবং দক্ষিণ জেলার সভাপতি বাবলা বড়ুয়া

সমাবেশের শুরুতে গণসংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। সমাবেশ-পরবর্তী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় ‘রক্তকরবী’, ‘আনন্দ নৃত্যকলা একাডেমি’ ও ব্যান্ড দল ‘নিঃশব্দ নাবিক’।

বক্তারা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতিবিজড়িত জালালাবাদ পাহাড় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার এবং সেখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী দামপাড়া ও পাহাড়তলী অস্ত্রাগার দখল করে, টেলিফোন ভবনে আগুন লাগিয়ে এবং রেল ও টেলিগ্রাফ লাইন বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামকে চারদিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করেছিলেন। শেষ দিনে, ২২ এপ্রিল, জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন বিপ্লবী শহীদ হন এবং ৮০ জন ব্রিটিশ সেনা নিহত হয়। এই ঐতিহাসিক বিদ্রোহ ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

বক্তারা বলেন, “আজকের ভোগবাদী সমাজে তরুণদের মধ্যে বিপ্লবের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হলে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ইতিহাস ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।”