চলমান সংবাদ

সড়ক দুর্ঘটনা: লকডাউন সত্ত্বেও ঈদের সময়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু

ঢাকার একটি রাস্তায় যান চলাচল।
ঢাকার একটি রাস্তায় যান চলাচল।

এবছরের কোরবানি ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশে সড়কপথে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি একটি সংস্থা।

জুলাই মাসের ১৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১৫ দিনের তথ্য সংকলন করে শুক্রবার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তারা বলছে, এসময়ে সারা দেশে লকডাউন জারি ছিল। তা সত্ত্বেও গত ছয় বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় আরো অন্তত ৪৪৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

তারা বলছে, প্রায় ৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ও অটোরিক্সা। প্রায় ২৯ শতাংশ দুর্ঘটনার সাথে জড়িত ছিল ট্রাক, পিক আপ ও কাভার্ড ভ্যান। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় ১৫ দিনের দুর্ঘটনার একটি হিসাব দিয়ে থাকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ২০১৫ সালের পর কোরবানির ঈদের ১৫ দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ বছরই। তবে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার সংখ্যা গত ছয় বছরের অনুপাতে ছিল তুলনামূলক কম।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মসহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন লকডাউনের পর রাস্তায় হঠাৎ ভিড় বেড়ে যাওয়া, গণপরিবহনের অপর্যাপ্ততা ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবের কারণে এ বছর দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবকে চিহ্নিত করছে নিরাপদ সড়ক চাই
দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবকে চিহ্নিত করছে নিরাপদ সড়ক চাই

মোটরসাইকেল যে কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার

মোজাম্মেল হক চৌধুরীর মতে চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন চলাচল কম থাকায় মোটর সাইকেল, ইজিবাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেড়েছে।

তিনি বলেন, “লকডাউন চলার কারণে সব বাসই কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করেছে। অধিকাংশ বাস ৬০ শতাংশ, কোনো কোনো বাস ১০০ ভাগ বেশি ভাড়া নিয়েছে। তাই অনেকেই বাসে ভ্রমণ করতে পারেননি।”

“এই যাত্রীদের অনেকে ভাড়ার মোটর সাইকেলে বাড়ি ফিরে গেছে। আমরা এমনও দেখেছি যে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাও বা কক্সবাজার পর্যন্তও মোটর সাইকেলে করে যাত্রা করছে মানুষ,” বলেন তিনি।

পাশাপাশি লকডাউনে অধিকাংশ গণপরিবহনের চলাচল সীমিত থাকায় ঈদের সময় মোটর সাইকেল, ইজিবাইক বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চলাচল বৃদ্ধি পাওয়াও এই ধরনের যানবাহন দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করেন মি. চৌধুরী।

১৪ই জুলাই থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে
১৪ই জুলাই থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে

ঈদের আগে অল্পদিনের জন্য লকডাউন শিথিল করায় বিপুল সংখ্যক মানুষ একসাথে রাস্তায় নামাও দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ। “এবার ঈদের আগে কোথাও কোথাও ৪০ কিলোমিটার, ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। এর থেকেই বোঝা যায় হঠাৎ করে বহু মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমেছিল,” বলেন মি. চৌধুরী।

এবছর আংশিক লকডাউনের মধ্যে ঈদযাত্রা হলেও দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল, কারণ প্রশাসনের নজরদারি অপেক্ষাকৃত শিথিল ছিল বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী মন্তব্য করেন, “প্রশাসন আসলে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যস্ত ছিল। তারা মনে করেছিল মানুষ অপেক্ষাকৃত কম সফর করবে। তাই মনিটরিংও কম ছিল।”

সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়াও ১৪ই জুলাই থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে নৌ ও রেলপথে আরো ২২টি দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪১ জন আহত হয়েছেন।

#সূত্রঃ বিবিসি বাংলা#