কেন র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত নয় জানিয়ে ব্লিংকেনকে মোমেনের চিঠি

র্যাবের ওপর কেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত নয় তা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে লেখা এক চিঠিতে এর সপক্ষে অন্তত পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন। ৩১ ডিসেম্বর লেখা চিঠিতে মোমেন বলেছেন, র্যাব একটি ভালো প্রতিষ্ঠান। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মোমেন চিঠির বেশ কিছু অংশ খোলাসা করেছেন। চিঠিতে যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-
“এক, র্যাবের কারণে আমাদের দেশে ক্রাইম অনেক কমেছে। দুই, সন্ত্রাসী তৎপরতা হ্রাস পেয়েছে। সন্ত্রাসীও কমে গেছে। তিন, র্যাব মাদকের বিরুদ্ধেও কাজ করে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। চার, তারা হিউম্যান ট্রাফিকিং বন্ধ করতে কাজ করে। বহু ট্রাফিকিং তারা নিষ্ক্রিয় করেছে। তাদের কাজে মানুষ সন্তুষ্ট। তাদের প্রতি দেশবাসীর আস্থা আছে। পাঁচ, তারা দুর্নীতিপরায়ণ নয়। দু’ একটা জায়গায় হয়তো ব্যত্যয় ঘটেছে। সেখানে তারা খুবই স্ট্রং অ্যাকশন নিয়েছে। ফলে র্যাবকে সবাই একটা স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও ইফেক্টিভ মনে করে। এছাড়া তারা যা কাজ করছে এটা গ্লোবাল গোলেরই অংশ।
র্যাব সদস্যরা ইউএসএ ও ইউকে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যদি তাদের অপারেশন প্রসিডিউরে কোনো দুর্বলতা থাকে তাহলে ইউএসএ এবং ইউকের প্রোগ্রামগুলো রি-এক্সামিন করতে হবে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে- “বাংলাদেশে গত ১০ বছরে ৬০০ জন মিসিং হয়েছে। এই তথ্যগুলো আমাদের কাছে নেই, এর বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবছর মিসিং হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর ১ লাখ মানুষ মিসিং হয়। যাই হোক, র্যাব যখন তৈরি হয় তখন আমাদের দেশেও এসব ছিল। এখন র্যাব অনেক বেশি ম্যাচিউরড। অপারেশন ক্লিনহার্টে ৫৫ জন মারা গিয়েছিল। এখন সারা দেশে একজন কি দুইজন মারা যায়।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সরাসরি তাদেরকে এটা বলিনি। আমরা শুধু বলেছি, র্যাব একটি ভালো প্রতিষ্ঠান। তাদের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।”
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপ অব্যাহত রাখার পক্ষে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র দপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এরা হলেন- র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান, র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মিফতাহ উদ্দীন আহমেদ। এ নিয়ে সরকারের তরফে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার ঢাকা সময় সন্ধ্যায় ড. মোমেনকে টেলিফোন করেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের ফোনালাপ বিষয়ে বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘ দিনের অংশীদারিত্ব সম্পর্কে আবারও নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এই দুই নেতা মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরালো করতে এবং অভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহমত পোষণ করেন।”
সূত্রঃ ভয়েস অফ আমেরিকা